এটা সেই রাতের ঘটনা৷ ১৪ই মার্চ রাত৷ দিনের বেলার "অপারেশন নন্দীগ্রাম' শেষ হবার পর রাতে সিপিএম স্থানীয়ভাবে একটি বারো ঘন্টার বন্ধ ডাকে৷ এই রকম একটি প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে লোকজন এমনিতেই সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঢুকে পড়ে, সেখানে এরকম একটি বন্ধ ডাকার অর্থ কি? দিনের আলোয় প্রথম পর্বের পুলিশি আক্রমণের পর, যখন খবর আসছিল, ৬০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, মানুষের মৃত্যুতে আমরা শিহরিত, আতঙ্কিত হচ্ছিলাম, তখনও জানা ছিলনা, এই গণহত্যার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পর্বটি এখনও বাকি থেকে গেছে৷ ঠিক তখনই, মহাকরণে আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিব এব ংস্বরাষ্ট স্র্চিব এই দ্বিতীয় এব ংভয়ঙ্করতম পর্বটির পরিকল্পনা করছিলেন৷ সেই পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত করতে বন্ধ এব ংরাতের অন্ধকারের প্রয়োজন ছিল তো বটেই৷
রাত নামছিল নন্দীগ্রামে আর মৃত্যু নিয়ে সংখ্যার খেলা ততক্ষণে যথেষ্ট ধূম্রজাল সৃষ্টি করে ফেলেছিল৷ সেই ধূম্রজাল পরেও কাটেনি৷ দৈনিক স্টেটসম্যান জানাচ্ছে ৩১ জন মৃত, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলি জানাচ্ছে ১৮ জন মারা গেছেন৷ বিবিসি সংবাদদাতা অমিত ভট্টশালী প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন ৩২ জন মারা গেছে, এব ংতারপরে প্রকাশ্যেই ঘোষণা করছেন, সরকার থেকে নির্দেশের ফলে বিবিসি কেবলমাত্র সরকারি সংখ্যাটিই ঘোষণা করতে বাধ্য, তাই তাঁরা সংখ্যাটাকে ১১ই রাখছেন৷ তারা টিভির গৌরাঙ্গ, যাকে পুলিশ দিনের বেলায় আটক করে সিপিএম বাহিনীর হাতে তুলে দেয়, এব ংপ্রকাশ্য টিভিতে যাঁকে সিপিএম বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হতে শোনা গেছে, তিনি তাঁর "অফ-দা-রেকর্ড' বক্তব্যে মৃতের সংখ্যা ১০০+, এব ংঅন-দা-রেকর্ড বক্তব্যে "অগুন্তি' বলে জানাচ্ছেন৷ তারা টিভির সংবাদদাতা সুব্রত, মমতার সঙ্গে ছিলেন, তিনি জানাচ্ছেন, মৃতের সংখ্যা "অসংখ্য', কারণ কারোর পক্ষেই সঠিক সংখ্যা জানা বা বলা সম্ভব নয়৷ মহান রাজ্য সরকার এব ংতার মুখপাত্র শ্রী ভোরা জানাচ্ছেন, মৃতের সংখ্যা ৬৷ এই সংখ্যাটাই তাঁকে জানানো হয়েছে, এব ংতিনি প্রেসকে পরে আরও জানাবেন৷
সংখ্যা, এভাবেই কমছিল বাড়ছিল, যেন মানুষ নয়, সংখ্যার খেলা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামে বন্ধ ও সন্ধ্যা নেমেছিল যথাসময়ে৷ তারা টিভির সুব্রত এব ংগৌরাঙ্গ ঘটনাস্থলে ছিলেন৷ রাতের সেই ভয়ঙ্করতম ঘটনার তারা প্রত্যক্ষদর্শী৷ এই বিবরণ মূলত: তাদেরই বিবরণ৷ ঘটনার বর্ণনার আগে সেই প্রত্যক্ষদর্শীর মুখ থেকে শুনে নেওয়া যাক, সেই সেন্সরশিপের কথা, যা, সে নিজেই নিজের উপর আরোপ করেছে৷ "আমি যা দেখেছি, আমার যা বলা উচিত, আমি মিডিয়াকে সেসব বলছিনা, কারণ মানুষ বা আমাদের দর্শকরা সেসব বিশ্বাস করবে না৷ মানুষের বিশ্বাসের একটা সীমা আছে, লোকে আমাকে পাগল বলবে৷ আমি যা দেখেছি, শুনেছি, যার মধ্যে দিয়ে গেছি, নিজেই নিজেকে সেসব বিশ্বাস করাতে পারছিনা৷ দু:স্বপ্নের রাতের মতো যদি যা দেখেছি, শুনেছি, সেগুলো সত্যিই যদি প্রলাপ হত৷৷৷ '
গৌরাঙ্গ এব ংসুব্রত জানাচ্ছেন, না,থেট্র বা মারধোরের কারণে নয়, সেই রাতে তাঁরা যা দেখেছেন, তার পর হোটেলের ঘরে ফিরে তাঁদের সত্যিই অনেকবার বমি করতে হয়েছে৷
""ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল্স আর কম্যান্ডোদের নিয়ে সিপিএম বাহিনী প্রত্যেকটা পাড়ায়, প্রত্যেকটা গ্রামে ঢোকে৷ পুরুষদের টেনে বার করে আনা হয়৷ ওরা কাউকে আটক করছিল না৷ কোনো বন্দী নেই, কোনো সাক্ষী নেই,ওরা গুলি করছিল,পেটে বেয়নেট ঢুকিয়ে নাড়িভুঁড়ি বার করে আনছিল,শরীরগুলো ভাসিয়ে দিচ্ছিল খালে, সেখান থেকে মোহনা আর সমুদ্রে৷ তারপর কমবয়সী মেয়েদের টেনে আনা হচ্ছিল, তাদেরকে ফাঁকা জায়গায় একসঙ্গে জড়ো করা হয়,ক্রমাগত ধর্ষণ করে চলা হয়, যতক্ষণ না একেকজন কোলাপ্স করে যায়, তারপর, একদম আক্ষরিক অর্থে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে আনা হয়,কাউকে কাউকে একদম টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়,তারপর হলদি নদী কিংবা তালপটি খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়৷ এসবের কোনো সাক্ষী টিকে নেই৷ থাকলেই বা কি,যদি কেউ বেঁচেও থাকে, মেদিনীপুরের কোন মেয়েই বা নিজের উপরে অত্যাচারের গল্প ফলাও করে বলবে, আর বললে বিশ্বাসই বা করবে কে? তাছাড়া কেউ বললে তাকেও তো একই জিনিস করে খুন করা হবে৷
এইসব শেষ হবার পর, সিপিএম আর পুলিশ তারপর গোটা এলাকা লাল ব্যানার আর পতাকা দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিল৷ মানে, এলাকা এখন নিরাপদ আর শুধু তাদের রাজত্বই চলবে৷ যারা গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল, তারা প্রায় সবাই ধরা পড়ে গ্রামের কিনারায় বা আশেপাশে৷ তাদের কি হয়েছে, কেউ জানেনা৷ আমরা শুধু তাদের কথাই শুনতে পেয়েছি, যারা মাঠ আর জঙ্গল পেরিয়ে পালাতে পেরেছে৷ সেটাও খুব কঠিন৷ এখন মাঠ শুকনো৷ ফসল কাটা হয়ে গেছে৷ মাঠের উপর দিয়ে গেলে যে কেউ দেখতে পাবে৷
অসংখ্য ধর্ষণ হয়েছে৷ সরকারি ভাবে ধর্ষণের সংখ্যা ৬, কারণ, এই কজনই নিজেদের গল্প বলার জন্য টিকে আছে৷ এরা সবাই মধ্যবয়সী, সেই কারণেই হয়তো কেটে কুচিকুচি হবার হাত থেকে কোনোভাবে বেঁচে গেছে৷ গ্রামের পর গ্রামে এই জিনিস চলেছে৷ রাত পেরিয়ে সকালেও চলেছে৷ সমস্ত সাংবাদিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ দৈনিক স্টেটসম্যানের সাংবাদিক সুকুমার মিত্র বুলেটবৃষ্টির মধ্যে কোনোরকমে পালিয়েছেন৷ ওনাকে নাম ধরে, বিশেষ করে খোঁজা হচ্ছিল, কোনো কায়দায় উনি পালাতে পেরেছেন৷ আক্রমণকারীরা এতো হিংস্র, যে স্থানীয় কোনো লোক কারো কাছে মুখ খুলতে চাইছে না৷ ভয়কে একটা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আতঙ্ককে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক সেন্সরশিপের একটা পদ্ধতি হিসাবে৷
পাশেই হরিপুর সাবডিভিশান৷ যেটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য চিহ্নিত৷ সেখানেও প্রতিবাদ হয়েছে৷ সেখানকার লোকেরা মূলত: মাছ ধরে৷ তাদের মাছ ধরা এখন বন্ধ করতে হয়েছে দুটো কারণে৷ এক, খাঁড়ি আর সমুদ্র মৃতদেহে ভরে আছে৷ দুই, আরও খারাপ যেটা, হাঙর, কুমীর আর ঘড়িয়ালরা তাজা রক্তের লোভে সুন্দরবন থেকে এইদিকে চলে আসছে৷ এরা মানুষের শরীর তো খাচ্ছেই, সঙ্গে সমস্ত মাছও খেয়ে নেবে এরকম একটা আশঙ্কা৷ মাছ ধরতে গেলে জালে কুমীর আর হাঙর উঠে আসছে৷ এরকম চলতে থাকলে হরিপুরের মানুষ আগামী সপ্তাহখানেক কাজ করতে পারবেনা৷ স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, হরিপুরকে শিক্ষা দেবার জন্য এটা প্রশাসন আর সিপিএমের পূর্বপরিকল্পিত৷ হরিপুরে কেন্দ্রীয় দল, এমনকি আরও বড়ো পুলিশ বাহিনী ঘুরে গেছে৷ নন্দীগ্রাম আর হরিপুরকে একসাথে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে৷
মৃতদেহের কোনো চিহ্ন কখনও পাওয়া যাবেনা,ধর্ষণের কোনো প্রমাণ থাকবেনা, এটাই এখন ওদের মডেল৷ সত্যিই কতজন মারা গেছে জানা যাবে তিন মাস পরে, তাও যদি এলাকায় শান্তি ফিরে আসে, যদি বাসিন্দারা আদৌ ফিরে আসতে পারে, যদি তারপর নিখোঁজ মানুষজনের সংখ্যা গোণা হয়৷ কিন্তু সিপিএম এখন এই এলাকাগুলোকে "মুক্ত', "স্বাধীন' করেছে, এর পরে মনে হয়না এলাকাছাড়াদের ফিরে আসতে দেওয়া হবে, আর এদের সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া হবে কেশপুর গড়বেতা থেকে সিপিএমের যে লোকজন এসেছে, তাদেরকে৷ নন্দীগ্রাম আর হরিপুরকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিরাপদ এলাকা বানিয়ে তারপর পুরোটা গুটিয়ে ফেলা হবে৷''
এই সেই গল্প, যা দেশভাগের গল্পের চেয়েও ভয়াবহ৷ সাংবাদিকরা সবাই এই সব জানেন, কিন্তু কেউই বলতে এগিয়ে আসবেননা৷ বললে তাদেরকে খুঁজে বার করা হবে, এব ংলোপাট করে দেওয়া হবে৷ যে সমস্ত সাংবাদিক এব ংবুদ্ধিজীবীরা বিপক্ষে গেছেন, তাঁদের ভয় দেখানো তো শুরু হয়েই গেছে৷
আমাদেরই তাই লিখতে হবে বিকল্প ইতিহাস৷ অন্য কোনো বিকল্প নেই৷ আমি জানিনা, কে কতটা বিশ্বাস করলেন, তবে নাম-ধাম-সূত্র সবই দেওয়া রইল আগ্রহী মানুষ, ইতিহাসকার এব ংভবিষ্যতের জন্য৷ যদি কেউ চান, তিনি যাচাই করতে পারেন৷ খুঁড়ে বার করতে পারেন৷ এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আছে কিনা আমার জানা নেই৷
http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?font=unicode&portletId=12&porletPage=1
सीपीएम की क्रांति
Friday, March 16, 2007
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
नंदीग्राम पर नयी फ़िल्म
यह फ़िल्म 14 मार्च की घटनाओं के सूक्ष्म विवरण के साथ आयी है.
देखें : नव उदारवाद का नया चेहरा बजरिये नंदीग्राम
देखें : विकास के नाम पर लोगों के उजड़ने की कहानी
उन्होंने मेरे पिता को टुकडों में काट डाला
देखें : न हन्यते
नंदीग्राम में 100 से ज्यादा लोग मारे गये हैं, 200 अब भी लापता हैं. वहां महिलाओं के साथ सीपीएम के कैडरों ने बलात्कार किया. बच्चों तक को नहीं छोड़ा गया है. सीपीएम की इस क्रूरता और निर्लज्जता का विरोध होना चाहिए. हमें नंदीग्राम, सिंगूर और हर उस जगह के किसानों के आंदोलन का समर्थन करना चाहिए, जो अपनी जमीन बचाने के लिए लड़ाई लड़ रहे हैं. यह दस्तावेज़ी फ़िल्म किसानों के इसी संघर्ष के बारे में है. यह फ़िल्म नंदीग्राम के ताज़ा नरसंहार से पहले बनायी गयी थी.
नंदीग्राम में जनसंहार के बाद के द्श्य
यह फिल्म पुलिस द्वारा नंदीग्राम में बर्बर तरीके से की गयी हत्याओं एवं उनकी भयावहता व बर्बरता के बारे में है. इसके कई दृ़श्य विचलित कर देनेवाले हैं.
नंदीग्राम प्रतिरोध्
नंदीग्राम में सरकारी आतंक
देखें : माकपा की गुंडागर्दी
नंदीग्राम में सीपीएम सरकार की पुलिस ने जो बर्बर कार्रवाई की, वह अब खुल कर सामने आने लगी है. यह फ़िल्म उसी बर्बरता के बारे में है. इसके कई दृश्य आपको विचलित कर सकते हैं. आप इसे तभी देखें जब आप वीभत्स दृश्य देख सकने की क्षमता रखते हों. हम खुद शर्मिंदा हैं कि हमें ऐसे दृश्य आपको दिखाने पड़ रहे हैं, पर ये आज की हकीकत हैं. इनसे कैसे मुंह मोडा़ जा सकता है?
No comments:
Post a Comment